পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে ভুয়া ওয়ারিশ সেজে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মূল ওয়ারিশ দাবি করে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মেলেনি। ফলে ভুক্তভোগীর পক্ষে ইয়েন রাখাইন নামে এক নারী পুনরায় জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। গত ১৮ আগস্ট পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বাবদ ভুয়া ওয়ারিশ সেজে ডিসির কাছ থেকে চেক হাতিয়ে নেয় বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজ বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি হয়েছে। বাদীপক্ষ উপযুক্ত যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে পারেনি। তাই অভিযোগটি খারিজ হয়েছে। পরবর্তী অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। ভুক্তভোগীর পক্ষে ইয়েন রাখাইন বলেন, পায়রা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের ৪.১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া/জরিপকালে তাদের আত্মীয় দামো রাখাইন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মালিক সাজিয়ে ওয়ারিশে অন্তর্ভুক্ত করে। অথচ দামো রাখাইন প্রকৃত ওয়ারিশকে (ভুক্তভোগীদের) বলে, তালিকা সঠিক হয়েছে এবং প্রকৃত ওয়ারিশদের নাম আছে। পরে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়ার নোটিশ দিলে আমরা দামো রাখাইনগংদের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারি এবং খোঁজ নিয়ে জানি তালিকায় আমাদের নাম নেই। ইয়েন রাখাইন আরও বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমির মূল মালিক আমাদের দাদা লুফ্রু মাতব্বর। ৮০ সালে লুফ্রু মাতব্বর নিজেই তার সেজো ছেলে আমাদের বাবা চিংলা মংকে দলিল মূলে ওই জমি লিখে দেন। আমাদের বাবা চিংলা মং-এর লোকান্তরে ওই জমির মূল ওয়ারিশ আমাদের মা এচিংমা ওরফে মা এচিং এবং আমরা দুই বোন ইয়েন ও মেয়েন এবং ভাই মমিও।

কিন্তু দামো রাখাইন আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে ওই সব ব্যক্তিদের ওয়ারিশ সাজিয়েছে। দামোগংদের প্রতারণার বিষয়ে জেনে ১২ জুলাই জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করি। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুলাই শুনানি হয়। ওই শুনানিতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা আইনজীবীর মাধ্যমে আমাদের সমন্বয় করতে বলেন। কিন্তু দামো রাখাইনগং আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার সমন্বয় করেনি। বরং গত ১৮ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ইয়াংসি মাতুব্বর-১২ লাখ ৪১ হাজার, চিংমো রাখাইন-১৯ লাখ ৯২ হাজার, মংমাচিন রাখাইন-২৬ লাখ ৪৫ হাজার, লাবঅং মাতুববর-৭ লাখ ৬৫ হাজার, মংচো রাখাইন-৬ লাখ ৫১ হাজার এবং লাচিংমো-১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকাসহ মোট ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার চেক হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট পুনরায় জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করি। চেকপ্রাপ্ত দামো রাখাইন বলেন, চিংলা মংদের জমি নিয়ে সাদেক গাজীদের সঙ্গে আদালতে মামলা চলছে। আমরা শুধু ঘরবাড়ি ও গাছপালার টাকার চেক নিয়েছি। এতে তাদের কোনো দাবি নেই। ইয়েন গং অহেতুক অভিযোগ করছে। আইনজীবী শামীম আহম্মেদ বলেন, বাদী-বিবাদী পরস্পর আত্মীয় থাকায় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আমার সামনে তাদের সমন্বয় করতে বলেছেন। কিন্তু দামো সমন্বয় না করেই সমন্বয় হয়েছে বলে দাবি করে চেক নিয়েছে।